অটিজম

অটিস্টিক শিশুর “মাই টাইম”

অটিজম বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৩৯:৫২

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত শব্দ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা শব্দ হলো মাই টাইম। সোজা বাংলায় বলতে গেলে “আমার সময়”। “একান্ত সময়”।
নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত সময়কেই সহজ ভাষায় বলা যায় মাই টাইম। যদি সামান্য ব্যাখ্যা করে বলতে যাই তবে বলতে হয়, প্রত্যেক মানুষ কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। জীবন জীবিকার দায়ে নিজের জন্যে সামান্য অবসর খুজে পান না।

পরিবার, চাকরী, আত্মীয়, সমাজ সব কিছুর ব্যালেন্স করতে গিয়ে কেমন জানি একটা চক্রের মধ্যে আটকে যায় সবাই। নিজের জন্যে কোনো সময় থাকে না। এতে করে সেই মানুষটা শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সব কিছুর মাঝে থেকেও খুব একাকীত্ব অনুভব করে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানীরা খুব করে জোর দিয়েছেন “মাই টাইমের” উপর।
একান্ত ব্যক্তিগত সময়। পারিবারিক বা সামাজিক যেকোনো দায়িত্ব কর্তব্য থেকে নিজেকে খানিকটা দূরে রেখে নিজের মত সময় কাটানো। নিজেকে নিজে সময় দেওয়া। আপাতত দৃষ্টিতে নিজেকে নিজে সময় দেওয়া মানে, একা একা থাকা মনে হলেও ঠিক ওই একা সময়টাই সেই মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে। মানসিক প্রশান্তি দেয়। প্রফুল্ল করে তোলে।

তাই প্রত্যেকটা মানুষের প্রয়োজন খানিকটা নিজের মত করে সময় কাটানোর।
ঠিক এটা থেকে ব্যতিক্রম নয় অটিস্টিক শিশুরাও। তাদেরও প্রয়োজন নিজের কিছু ব্যক্তিগত সময়। একান্ত কিছু মুহূর্ত।

এমনিতেই জন্মগতভাবে কিছুটা অস্বাভাবিক হওয়াতে মা-বাবা সব সময় এটা ভেবে থাকে যে তাদের সন্তান নিজে নিজে কিছুই করতে পারবে না। সারাক্ষণ নিজেদের অটিস্টিক সন্তানকে চোখে চোখে রাখে। বিশেষ কোনো কাজ তো করতেই দেয়া হয় না, সন্তানের একান্ত কিছু সময় কাটানোর ব্যাপারেও বেশ উদাসীন।

অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা তাদের সন্তানকে চোখে হারাতে চান। ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে আবার ঘুমিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মা-বাবা তার সন্তানকে একা হতে দেয় না। একাকী সময় উপভোগ করা শেখায় না। সারাক্ষণ সবার নজরদারীর ভেতরে থাকতে হয়। যার ফল মোটেও ভালো হয়না।

খালি চোখে দেখতে গেলে মা-বাবা যা করে তাই ঠিক বলে মনে হলেও আসলে তা সবসময় ঠিক নয়।  হোক একজন অটিস্টিক বা স্বাভাবিক শিশু, বা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেকে মানুষের জন্যে প্রয়োজন একান্ত কিছু সময়। যা ‘মাই টাইম’ নামে পরিচিতি।

শিশুকে “মাই টাইম” বা তার একান্ত সময় তার নিজেকে দিতে অভিভাবক হিসেবে আপনি যা যা করতে পারেন তা হলো-

দিনের কিছুক্ষণ সময় তাকে একা ছেড়ে দিন। একা মানে একাই। তাকে তার ঘরে, বসার ঘরে বা ঘরের বাইরের বাগানে ছেড়ে দিন। সে যা ইচ্ছে করুক। তাও নিজের মত থাকুন । নিজেকে নিজে সময় দিক। নিজেই নিজের সঙ্গ উপভোগ করুণ। নিজের সাথে নিজে কথা বলুক। তবে আপনাকে ওর উপর নজর রাখতে হবে লুকিয়ে। যাতে করে বিশেষ কোনো দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে। বা দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা না থাকলেও আপনার দায়িত্ব তাকে মাঝে মাঝে এসে দেখে যাওয়া। তবে সেটা হবে শুধু দেখা। তাকে বিরক্ত করা যাবে না।

তার প্রিয় জিনিস গুলো বেছে নিন। কি চায় সে, কিসে আনন্দ পায়, কোন ব্যাপারটা তাকে বেশি খুশি করে এই বিষয় গুলো লক্ষ করুণ । যখন শিশু একান্ত সময় কাটাতে শুরু করবে তখন তাকে তার প্রিয় জিনিষ গুলো দিয়ে দিন। দেখবেন, সে নিজে নিজেই তার পছন্দের জিনিষ বেছে নেবে। নিজে ছবি আকবে বা গান গাইবে।

সব চেয়ে বড় কথা হলো, শিশুকে তার একাকীত্বটা উপভোগ্য করতে শেখাতে হবে। অন্যের কৌতুহল বা নিজেদের দুর্বলতা হোক, অটিস্টিক শিশুদের একা একা থাকার সুযোগটাই হয় না। সব সময় তাদের অন্যের সাহায্য নিতে হয়। মা-বাবা চোখে চোখে থাকতে হয়। কিন্তু, নিজের প্রয়োজনে , আত্মাকে বিশুদ্ধ করতে, মানসিক শান্তি পেতে অটিস্টিক শিশুদেরও প্রয়োজন “মাই টাইম”। যে সময়টা একান্তই তাদের হবে। শুধু তাদের।

তাই, আপনার অটিস্টিক সন্তানকে তার “মাই টাইম” দিন। নিজের সঙ্গ উপভোগ করতে শেখান। এতে করে শিশুর মানসিক উন্নতি ঘটবে। চঞ্চলা ও কমে যাবে।