অটিজম

কমিউনিকেট করতে পারলে সেলফ ইনিজুরির প্রবণতা কমানো সম্ভব

অটিজম বৃহস্পতিবার, ০৯ জুলাই ২০২০ ০২:০৯:২৮

অটিজম বা ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অনেক পিতা-মাতাকে আত্মঘাতী আচরণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। আত্মঘাতী আচরণ হল -  যখন একজন ব্যাক্তি এমন আচরণ করে যা তার নিজেকে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন করে। সাধারণভাবে আত্মঘাতী আচরণগুলো হচ্ছে – শক্ত কোন কিছুতে মাথা ঠুকরানো, হাত বা বাহু কামড়ানো, চুল ছিড়ে ফেলা, চোখে আঘাত করা, মুখে বা মাথায় চাপড় মারা, চামড়া তোলা, নখ দিয়ে আঁচড় দেয়া বা চিমটি কাটা ইত্যাদি।

আত্মঘাতী আচরণের পরিণাম ব্যাক্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে, এমনকি মৃত্যু। অনেক পিতা-মাতা বা শুশ্রূষাকারীর পক্ষে এই রকম আচরণ দেখে তা বন্ধ করার জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে না পারাটা খুব কঠিন হয়ে পরে। কিন্তু যারা যত্ন নেয় তাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয়, যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন তাদের উপদেশ নেয়া এবং তাদের নির্দেশনা মানা।  আত্মঘাতী আচরণকারী ঠিক কি চাচ্ছে বা কেন এমন করছে, এ ব্যাপারটা বুঝতে পারাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাহলে এরকম আত্মঘাতী আচরণকারীকে এরকম আচরণ করা হতে বিরত রাখা সম্ভব।

আত্মঘাতী আচরণের সমস্যা সমাধানের জন্য যারা এ ব্যাপারে পেশাদার এবং অভিজ্ঞ, তাদের সাথে আলাপ করুন। তারা ফাংশনাল বিহেভিওর এসেসমেন্টের মাধ্যমে এবং ঐধরণের আচরনকারীর বাবা মা এবং কেয়ার গিভারদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আচরণসমুহ মূল্যায়ন করেন এবং কারণ চিহ্নিত করেন। সবশেষে তারা বিহেভিওর সাপোর্ট প্ল্যানের অংশ হিসাবে কিছু পরামর্শ এবং গাইডলাইন নির্ধারণ করে দেন। সেগুলো আত্মঘাতী আচরণগুলো ঘটার সংখ্যা এবং তীব্রতা কমিয়ে আনতে সহায়ক হয়।  

একজন শুশ্রূষাকারী হিসাবে এটা জানা খুবই জরুরী যে কখন শিশুটি আত্মঘাতী আচরণ করতে যাচ্ছে। একটি মানসম্পন্ন বিহেভিওর সাপোর্ট প্ল্যান থাকলে সেটি সহজ হয়। এ ধরনের প্ল্যানে নিম্নে বর্ণিত ধাপসমূহ ব্যাখ্যাসহ থাকে।

১। আচরণটি ঘটার পুর্বে (এটাকে প্রতিরোধ করতে)
২। যখন আচরণটি ঘটে (এটাকে বন্ধ করতে এবং আঘাত ঠেকাতে)
৩। আচরণটি ঘটে যাওয়ার পরে (যেন পরে না ঘটে সে সম্ভাবনা তৈরি করতে)

অনেক ক্ষেত্রেই কোন চাহিদাকে কমুনিকেট করার জন্য আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দেয়। সাধারণত যে চাহিদাগুলো হয়ঃ

১। স্পর্শ কর/জরিয়ে ধর
২। আমি এটা করতে চাই না
৩। এটা যেমন তেমনটা আমার পছন্দ না
৪। আমার একঘেয়ে লাগছে বা উদ্দীপ্ত হচ্ছি না
৫। আমার প্রিয় খেলনাটা আমি চাই
৬। আমি যখন এটা করি আমার ভাল লাগে

প্রত্যেকের নির্দিষ্ট চাহিদাগুলো সনাক্ত করার জন্য আলাদা আলাদা যথাযথভাবে সুসম্পন্ন করা আচরণের মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক। যদি আত্মঘাতী আচরণের কারণ সনাক্তে এসেসমেন্ট তৈরিতে ভুল হয় তাহলে এর ফলাফল চিকিৎসা পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলবে যা আত্মঘাতী আচরণ না কমিয়ে বরং আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

এ ধরনের আচরণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কমিউনিকেট করা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য আনতে সক্ষম। যদি একজন ব্যাক্তি তার কী প্রয়োজন তা বলতে পারে তখন তাহলে তার আর নিজেকে আঘাত করার প্রয়োজন হবে না। যেমন, যে ব্যাক্তি মাঝে মাঝেই নিজেকে আঘাত করে বা নিজেকে আহত করে, সে যদি সাধারণ বাক্য তৈরি করতে শেখে (“আমার ব্রেক চাই”, “আমার আই প্যাড লাগবে”) তাহলে দেখা যাবে সে কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি মাসের পর মাস কাটিয়ে দিবে আত্মঘাতী আচরণ না করে। অন্যেরা এমন করেছে, অতএব আপনার সন্তানও পারবে। অটিজম আক্রন্তদের মধ্যে যারা নন ভার্বাল বা যারা কমিউনিকেশন ডিজর্ডারে ভোগেন, তাদের মধ্যে কমিউনিকেশনের অভাবে নিজেকে আহত করার প্রবণতা এ জন্যেই বেশী দেখা যায়। আমরা এখানে মূলত অটিজমে আক্রান্তদের সেলফ ইনজুরি নিয়েই আলোকপাত করেছি।

এইসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে এ বিষয়ে প্রফেশনাল ব্যাক্তিদের সাথে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়াই সবচেয়ে উত্তম।

অবশ্যই যোগাযোগ করতে পারেন। এধরণের সেবা প্রদানকারী অনেক সংস্থা রয়েছে।