বধিরতা
ছবিটি ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত

জন্মের পর কি করে বুঝবেন আপনার শিশু বধির কিনা?

বধিরতা রবিবার, ০৬ জানুয়ারী ২০১৯ ০৯:৫১:২১

জন্মের পর থেকেই শিশুরা দেখে ও শুনে। কানে শোনার উপর নির্ভর করে শিশুর জ্ঞান বুদ্ধি। কারন যেকোনো কথা কানে শোনার পরই মস্তিষ্কে ধারণ করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতি কিছু নিষ্ঠুর নিয়মেই হাজার হাজার স্বাভাবিক  শিশুর মাঝে কিছু সংখ্যক বধির শিশু জন্ম নেয়। সাধারণত কানে কম শোনা বা না শোনাকেই বলে বধিরতা।

জন্মের পরপর ই আপনি আপনার শিশুর ছোখ, নাক ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে পারলে ও আপনি কোনো ভাবেই এটা বুঝতে পারনেব না যে, আপনার শিশু কানে শুনতে পাচ্ছে কিনা। কারন যেকোনো দৈহিক ক্ষত চাক্ষুষ নির্ণয় করা গেলেও কোনো শিশু বধির হয়ে জন্মেছে কিনা তা জন্মের পরপর ই দেখে বলে দেয়া সম্ভব নয়।    তবে কিছু লক্ষণ দেখে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশু বধির কিনা।

বধির কিনা বোঝার সাধারণ উপায়ঃ
সাধারণত শিশু জন্মাবার দুইমাস পরেই উচ্চগ্রামে প্রতিক্রিয়া করে। তারা তাদের উপস্থিতি বুঝাবার চেষ্টা করে নানা ভাবে। শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ  সমানভাবে জানান দেয় তাদের উপস্থিতি ।
কিন্তু নিচের এই লক্ষণ গুলো দেখেই বুঝা যাবে শিশুর কান বা শ্রবণ ইন্দ্রীয় অস্বাভাবিক কিনা।


১। শিশু সাধারণত কোনকিছু বলতে বুঝাতে না পারলেও অল্প বয়স থেকেই শব্দের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। তিন মাস বয়স থেকেই সাধারণত শিশু যেকোন উচ্চশব্দ শুনলে তার প্রতিক্রিয়া জানাবে অথবা হঠাৎ শব্দের কারনে চমকে উঠবে। যদি কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়া যায় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

২। শব্দের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ শিশু দুধ পানরত্ অবস্থায় দুধ পান করা বন্ধ করে এদিক ওদিক তাকায়। যেকেনো উচ্চ শব্দ শুনে তিন মাস বয়সে শিশু দুধ চোষা বন্ধ না করলে।

৩। ছয় মাস বয়সের পর থেকে কোনো শব্দের কারনে মাথা ঘুরিয়ে কান না পাতলে।

৪। ছয় মাস বয়সে কেউ কথা বলতে থাকলে তার দিকে তাকিয়ে না থাকলে।

৫। নয় মাস বয়সে মায়ের ডাকে বা নিজের নাম শুনে সাড়া না দিলে।

৬। এক বছর বয়সে ২-৩ টা শব্দ না বলতে পারলে।

৭। আঠারো মাস বয়সে ২০ টি শব্দ না বলতে পারলে।

৮। দুই বছর বয়সে শব্দের জোড়া লাগাতে না পারলে।

৯। এক থেকে দেড় বছরের বয়সে শিশু কোনো নাচ বা গানের সাথে তাল না মেলালে বা ওই নাচ গান তার মাঝে কোনো প্রভাব ই  না ফেলতে পারলে।

১০। গাড়ির হর্ন বা গাড়ি চলার শব্দ শুনেও পুলকিত হওয়া বা ভয়ভীতি অনুভব না করলে।

উপরের এই লক্ষণগুলো দেখতে পারলেই বুঝতে হবে শিশু বধিরতায় আক্রান্ত।

সারা পৃথিবীতে ৩৬কোটি মানুষ কানে কম শোনে বা এক্কেবারেই শোনেনা। এর মধ্যে ৩.২কোটিই শিশু। তাই যখনই শিশুর মাঝে বধিরতার লক্ষণ দেখা যাবে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিশু বধির হয়ে জন্ম নেয়ার সাধারণ কারণঃ
সাধারণত বধির বা কানে কম শোনার কিছু বিশেষ কারন ও রয়েছে। ৪০ শতাংশ বধিরতা জন্মগত বা বংশগত হয়ে থাকে। এছাড়া ও শিশু যদি নির্ধারিত সময়ের আগে ভুমিষ্ঠ হয়, শিশুর স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে যদি কম ওজন হয়, জন্মের সময় যদি শ্বাসকষ্ট বা জন্ডিস এধরনের রোগ দেখা দেয় তবে শিশু বধিরতা জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
গর্ভবতী মা যদি রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে তার সন্তানের বধিরতা জনিত রোগ হতে পারে।
শিশুর জন্মের পর যদি কোনো ভাবে মাথায় আঘাত পায়, শিশু জম্নের পর সাথে সাথেই যদি না কাঁদে তাহলেও শিশুর বধির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুদের কানে যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, কান থেকে যদি পুজ বা খৈল জনিত কিছু জমে যায় তবে বধিরতা দেখা দিতে পারে।
কানে ধুলাবালি বা অত্যাধিক পানি জমে যাওয়ার কারনে ও বধিরতা দেখা দেয়।
শিশুদের কানে স্মার্টফোন, হেডফোন বা অতিরিক্ত সাউন্ড দিয়ে টেলিভিশন দেখার কারনের ও বধিরতা দেখা দেয়।
বধিরতার আরো একটা অন্যতম কারন হচ্ছে অত্যাধিক ওষুধ সেবন করা। আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শিশুদের ওষুধ দিয়ে থাকি। অনেক সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ ও শিশুদের মাঝে খারাপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে বধিরতা দেখা দিতে পারে।

ইএনটি ডাক্তার প্রো.টোরিয়াস মোসার বলেন “শ্রবণ শক্তির অভাবে অডিটারি প্যানাল টিমপ্যানাস ও হতে পারে। সাধারণ সব হেয়ার সেন্সর সেল শব্দকে স্নায়ুর স্পন্দনে রুপান্তরিত করে।সেগুলোর বেশি ক্ষতি হলে হিয়ারিং যন্ত্র আর কাজ করেনা। তখন ককলিয়া ইমপ্লান্ট বসাতে হয়। তার কাজ হলো ত্রুটি পূর্ণ  হেয়ার সেন্সর এড়িয়ে শব্দকে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে স্নায়ুর স্পন্দন সৃষ্টি করা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরেও বধির শিশুদের অতিরিক্ত কিছু  যত্ন নিতে হবে। যেমন অধিকাংশ পিতামাতা সন্তানদের বেশি সময় দেন না।শিশুদের শান্ত রাখার জন্যে টেলিভিশন , ল্যাপটপ, মোবাইল এসব দিয়ে থাকেন।  কিন্তু বধির শিশুদের বেলায় এ ধরণের কাজ একেবারেই করা যাবেনা।  তাদেরকে প্রচুর সময় দিতে হবে।যে কথা তারা শুনতে পায়না সেই কথা ইশারা ইঙ্গিত দিয়ে তাদের বোধগম্য করতে হবে।  কারন, এই বধির শিশুরা স্বাভাবিক ভাবে কারো সাথে মিশতে পারেনা। খেলাধুলা করতে পারেনা। প্রচুর মানসিক চাপ আর একাকিত্বে ভুগে। এদের মেজাজ সাধারনের চেয়ে খিটখিটে হয়। তাদের এই সমস্যা একমাত্র সমাধান হতে পারে সুচিকিৎসা আর পরিবার থেকে অনেক বেশি সাপোর্ট। 

লেখিকাঃ জুহানা মোর্শেদা

ট্যাগ : বধির, deaf,